জমি ক্রয় করতে হলে কী কী কাগজপত্র দেখে নেওয়া জরুরি?

জমি ক্রয় করতে হলে কী কী কাগজপত্র দেখে নেওয়া জরুরি?

জমি কেনার স্বপ্ন অনেকেরই থাকে, কিন্তু সত্যি কথা বলতে কী — জমি কেনা মানে শুধু টাকার কথা নয়, তার সঙ্গে মাথার “বুদ্ধি”, চোখের “সতর্কতা” এবং কাগজের “পরীক্ষা” জরুরি। কারণ ভুল জমি কিনলে বিপদের পরিমাণ এমন হবে যে, শেষে মনে হবে— “জমি কিনতে এসেছিলাম, উল্টে জমেছে কান্না!”

তাই জমি কেনার আগে কোন কোন কাগজ দেখতে হবে, কোন কোন আইনি বিষয় যাচাই করতে হবে, এবং কোন ভুল করলে সমস্যা হতে পারে— সবকিছুই এখানকার এই দীর্ঘ ও ডিটেইল্ড গাইডে সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করলাম।

ওয়ারিশসূত্রে জমি পাওয়া হলে ওয়ারিশান সার্টিফিকেট অবশ্যই দেখুন

যদি বিক্রেতা তার পূর্বপুরুষ থেকে জমিটি পেয়ে থাকেন, তাহলে প্রথমেই দেখতে হবে— ওয়ারিশান সার্টিফিকেট আছে কি না।

এটি দেখলে নিশ্চিত হওয়া যায় যে জমির প্রকৃত মালিক কে, এবং বিক্রেতার জমি বিক্রি করার আইনগত অধিকার রয়েছে কি না।

অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়—

  • কারো বাবা বা দাদা জমি রেখে গেছেন,

  • কিন্তু পরিবারের সব সদস্যের নাম ওয়ারিশান সার্টিফিকেটে নেই,

  • পরে কোনো আত্মীয় এসে দাবি করে— “এ জমিতে আমার অংশ ছিল!”

ফলাফল? ক্রেতার মাথায় হাত। এই ভুল এড়াতে শুরুতেই ওয়ারিশান সার্টিফিকেট দেখে নিন।

রেকর্ড অফ রাইটস (ROR) বা পর্চা — মালিকানার আসল পরিচয়পত্র

যে কাগজটি জমির প্রকৃত মালিকানা দেখায়, সেটি হলো ROR / Porcha। এটি রাজস্ব দপ্তরের অফিসিয়াল রেকর্ড।

এতে থাকে—

  • জমির মালিকের নাম

  • জমির দাগ নম্বর

  • খতিয়ান নম্বর

  • জমির শ্রেণী (যেমন— বাগান, বসত, কৃষিজমি)

  • পুরানো মালিকানার ইতিহাস

এক কথায় — “বাপের সম্পত্তির চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো ROR!”

ROR না দেখে জমি কেনা মানে চোখ বন্ধ রেখে নদীতে ঝাঁপ দেওয়া। বাঁচলেও ভাগ্য, না বাঁচলেও ভাগ্য!

জমি অন্য কারো থেকে দলিল করে পেয়ে থাকলে আগের দলিল অবশ্যই যাচাই করুন

যদি বিক্রেতা কোনো দলিলের মাধ্যমে জমি পেয়ে থাকেন, তাহলে সেই দলিল দেখে বুঝে নিন—

  • কোন শর্তে হস্তান্তর হয়েছে

  • দলিলে কোনো বাধা বা নিষেধাজ্ঞা আছে কি না

  • জমিটি বিক্রি করার অধিকার বিক্রেতার আছে কি না

  • দলিলে উল্লেখিত সীমানা আজকের সীমানার সঙ্গে মেলে কি না

অনেক দলিলে “হস্তান্তর নিষিদ্ধ” লেখা থাকে। সেই জমি কিনলে আইনি জটিলতা নিশ্চিত।

জমির খাজনা ও ট্যাক্স আপডেট আছে কি না — ট্যাক্স বকেয়া থাকলে বিপদ

জমির খাজনা বা ল্যান্ড ট্যাক্স বছরের পর বছর বকেয়া থাকলে, ভবিষ্যতে সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে ঝামেলা হতে পারে।

খাজনা আপডেট পেমেন্ট রসিদ দেখে নিন—

  • রসিদে মালিকের নাম মিলছে কি না

  • খতিয়ান ও দাগ নম্বর ঠিক আছে কি না

  • সাম্প্রতিক বছরের ট্যাক্স দেওয়া আছে কি না

ট্যাক্স বকেয়া থাকলে আপনি কিনে নিলে, পুরোনো ট্যাক্স কিন্তু আপনাকেই দিতে হবে।

জমির সীমানা, ম্যাপ ও সইযুক্ত প্ল্যান — “কাগজের জমি” বাস্তবের জমির সঙ্গে মিলছে কি না?

সীমানা সংক্রান্ত ভুল হলো জমি কেনার সবচেয়ে বড় মাথাব্যথা।

চেক করতে হবে—

  • দলিলে উল্লেখিত চারদিকের সীমানা

  • পাশের জমির মালিক কারা

  • জমির প্ল্যান (যদি থাকে)

  • কোনো ভাগবাটোয়ারা বিতর্ক আছে কি না

  • শরিকদের মধ্যে কোনো মামলা চলছে কি না

জমির সীমানা ও ম্যাপ সঠিক না হলে ক্রেতা পরে আইনি লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়তে পারেন।

জমি কি কারো কাছে লিজ বা ভাড়া দেওয়া আছে?

অনেকে জমি অন্যকে লিজে দিয়ে বছরের পর বছর ব্যবহার করতে দেন।
সেই জমি আপনি কিনলে প্রথমে দেখতে হবে—

  • লিজ চুক্তি আছে কি না

  • লিজের সময়সীমা কত

  • লিজ গ্রহীতা জমি ছাড়বেন কি না

লিজে থাকা জমি কিনলে দখল পেতে সময় লাগতে পারে, অনেক ক্ষেত্রে মামলা পর্যন্ত গড়ায়।

অন্তত ৩০ বছরের হস্তান্তর ইতিহাস যাচাই করুন

আইনে জমি কেনার আগে ৩০ বছরের টাইটেল সার্চ বা property search করা বাধ্যতামূলক।

B. Pramanik & Associates-এ আমরা সাধারণত—

  • শেষ ৭ ধারাবাহিক মালিকানা

  • হস্তান্তর দলিল

  • কোর্ট কেস

  • বন্ধক

  • বিক্রয় ইতিহাস

— সবকিছু যাচাই করি। এর কারণ হলো— কোনো দলিলের ছোট ভুল পরবর্তীতে বড় আইনি ঝামেলা তৈরি করতে পারে।

জমি কি কোনো সরকারি অধিগ্রহণের তালিকায় আছে?

জমি কেনার আগে দেখে নিন— জমিটি কি সরকারের land acquisition list-এ আছে?

কারণ সরকার বহুসময় রাস্তা, হাসপাতাল, রেললাইন, সরকারি প্রকল্পের জন্য জমি চিহ্নিত করে।
সেই জমি কিনলে, পরে সরকার তা নিয়ে নিলে ক্রেতা সমস্যায় পড়ে।

MLA, Collectorate অথবা BLLRO অফিসে জেনে নিতে পারবেন।

জমি কি কোনো ব্যাংক বা প্রতিষ্ঠানে বন্ধক রাখা আছে?

হোম লোন বা ব্যবসার লোনের জন্য জমি ব্যাংকে মর্টগেজ রাখা হয়।

জমি কেনার আগে অবশ্যই চেক করুন—

  • ব্যাংক NOC আছে কি না

  • বন্ধক মুক্তির সার্টিফিকেট আছে কি না

বিক্রেতা যদি জমি বন্ধক রেখে থাকে, এবং আপনাকে না জানায় — তাহলে সেই দেনা আপনি কিনে ফেলবেন!

কোনো সিভিল মামলার মধ্যে জমি রয়েছে কি না?

জমির কোর্ট কেস থাকলে তা কেনা মানেই ঝামেলা।
সিভিল মামলা থাকতে পারে—

  • সীমানা নিয়ে

  • দখল নিয়ে

  • পারিবারিক বিবাদে

  • নালিশি কেস

জমির Civil Suit Search Report অবশ্যই সংগ্রহ করুন।

জমির বাস্তব দখল কার হাতে? — “দখল যার, জমি তার”!

অনেক সময় জমি কাগজে বিক্রেতার হলেও দখল থাকে অন্য কারো হাতে।

পরীক্ষা করুন—

  • জমিতে বাস্তবে কে থাকে

  • চাষ করেন কে

  • জমির চারদিকে বেড়া আছে কি না

  • কোনো বহিরাগত দখলদার আছে কি না

জমির দখল পরীক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

মৌজা ম্যাপ অনুযায়ী জমির অবস্থান মিলিয়ে দেখুন

দলিলের জমি ও বাস্তবের জমি — দুটো এক কিনা নিশ্চিত করতে হবে—

  • Mouza Map

  • Plot to Plot matching

  • Boundary measurement

  • GPS coordinate (optional)

যদি দলিলের জমি “দক্ষিণে ২০ ফুট রাস্তা” বলে, আর বাস্তবে উত্তরেই রাস্তা থাকে— বুঝবেন সমস্যা আছে।

বিক্রেতার পরিচয়পত্র — আধার, প্যান, ভোটার কার্ড

জমি বিক্রি করতে হলে বিক্রেতার পরিচয় যাচাই করতে হবে। দেখে নিন—

  • আধার কার্ড

  • প্যান কার্ড

  • ভোটার কার্ড

বিক্রেতার পরিচয়পত্রে থাকা ঠিকানা ও দলিলের ঠিকানা প্রায়শই মেলে না। অমিল থাকলে অতিরিক্ত সতর্ক হোন।

জমির শ্রেণী — রেকর্ডে যা আছে, বাস্তবে কি তাই?

জমির শ্রেণী খুব গুরুত্বপূর্ণ। যেমন—

  • পুকুর

  • ডোবা

  • কৃষিজ জমি

  • বসতবাড়ির জমি

যদি রেকর্ডে লেখা থাকে “পুকুর”, আর বাস্তবে ভরাট করে বাড়ি উঠিয়ে দেওয়া হয়—
আপনি কিনলে বড় সমস্যা হবে। কারণ সরকার বা পৌরসভা এটিকে অবৈধ বলে ভেঙে দিতে পারে।

জমিতে বাড়ি থাকলে অনুমোদিত প্ল্যান আছে কি না

বাড়িটি কি—

  • পৌরসভার প্ল্যান অনুযায়ী তৈরি?

  • লাইসেন্স ও অনুমোদন রয়েছে?

  • সেন্টার লাইন, ফাঁকা জায়গা নিয়ম মেনেছে?

অবৈধ কনস্ট্রাকশন কিনলে ভবিষ্যতে জরিমানা, নোটিস, এমনকি বাড়ি ভাঙার সিদ্ধান্তও আসতে পারে।

জমি হস্তান্তরে কোনো ধর্মীয় বা আইনি বাধা আছে কি না

যেমন—

  • দেবোত্তর সম্পত্তি

  • ওয়াকফ সম্পত্তি

  • ট্রাস্টের জমি

এই ধরনের জমি বিক্রি করার জন্য বিশেষ অনুমতি প্রয়োজন।

অনুমতি ছাড়া এই জমি কিনলে দলিল অবৈধ হয়ে যাবে।

জমি কিনুন বুঝে, যাচাই করে, বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে

জমি কেনা জীবনের একটি বড় সিদ্ধান্ত।
আপনার জীবনের সঞ্চয়, বিনিয়োগ এবং নিরাপত্তা— সবই এই জমির ওপর নির্ভর করে।

তাই জমি কেনার আগে B. Pramanik & Associates প্রফেশনাল আইনি টিম আপনাকে সম্পূর্ণ টাইটেল সার্চ, ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশন, জমির কাগজ পরীক্ষা এবং আইনি পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করতে প্রস্তুত।

“জমি কিনুন, কিন্তু কাগজ না দেখে কখনোই নয়!”

যোগাযোগ করুন – B. Pramanik & Associates

📞 Phone Number: +91 93390 55647
📩 Mail: info@bpramanikassociates.com
📍 Address: First Floor – 211, SDF Building, Sector V, Salt Lake City, Kolkata – 700091, West Bengal

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *